যদুনন্দিতে আ.লীগ নেতার ইন্ধনে গ্রামবাসীর উপর হামলা মামলায় নির্যাতনের অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফরিদপুর টাইমস:
ফরিদপুরের সালথা উপজেলার যদুনন্দি ইউনিয়নের খারদিয়া গ্রামে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক নেতা ও তার ভাইয়ের দৌরাত্মে গ্রাম ছাড়া সাধারণ মানুষ। বাড়িঘর ভাংচুরের পর হয়রানীমুলক মামলায় নিরীহদের গ্রেফতারের প্রতিবাদ ও নিরাপত্তাহীনতার প্রতিকার চেয়ে তারা মানববন্ধন করেছে।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, তাদেরকে মিথ্যা অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করে থানায় আটক করছে এবং ভ্রাম্যমান আদালতে সাজা দেয়া হচ্ছে। যদিও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কমিটির সদস্য নুরুজ্জামান ঠাকুর টুকু অভিযোগ করেন, যদুনন্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর মিয়া গ্রামের ফসলী জমিতে একটি ইটভাটা করেন। এতে সাধারণ কৃষকদের পার্শ্ববর্তী জমির ফসল বিনষ্ট হয়ে যাওয়ায় তারা প্রতিকার চান। একারণে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই কৃষকদের উপর হামলা চালিয়ে তাদের গুরুতর আহত করা হয়।
তিনি আরো অভিযোগ করেন, এঘটনার পর উল্টো তারা বাড়ি ঘরে ভাংচুর ও ইটভাটায় হামলার ঘটনা সাজিয়ে থানায় মিথ্যা মামলা করে। এরপর গত ১৫ নভেম্বর স্থানীয় আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনার জের ধরে তাদের গ্রামের প্রায় দেড় শতাধিক নিরীহ গ্রামবাসীর আসামী করে থানায় মামলা করা হয়। এসব মামলায় তাদের পুলিশ দিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে। বকুল মাতুব্বর (৩৫) কে তার দোকান থেকে ও মনিরুজ্জামান হুমায়ন (৭০) নামে এক বৃদ্ধকে চায়ের দোকান থেকে আটক করে অন্যায়ভাবে ভ্রাম্যমান আদালতে সাজা দিয়েছে।
তিনি বলেন, এই গ্রামটিতে যুদ্ধাপরাধী মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত বাচ্চু রাজাকারের বাড়ি। গ্রামের যেই মানুষটি আলমগির মিয়ার অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে কথা বলে তাকেই বাচ্চু রাজাকারের দোসর বানিয়ে প্রশাসন দিয়ে গ্রেফতার করানো হয় কিংবা নিজস্ব লোকজন দিয়ে হামলা করছে। অথচ তার সহযোগী হাবিব এই বাচ্চু রাজাকারের সৎ ভাই এবং সে নিজে হাবিবের চাচাতো ভাই।
ওই গ্রামের কৃষক লাবলু ফকির (৩৩) বলেন, ৭৫ শতাংশ জমিতে আমি ধান রোপন করেছিলাম। ইটভাটার কারণে ধান নষ্ট হয়ে যায়। এর প্রতিবাদ করায় আমাকে আহত করে উল্টা মিথ্যা মামলায় আসামী করা হয়েছে। একই অভিযোগ করেন কৃষক গুলজার মোল্যা সহ আরো অনেকে।
জাকিরন বেগম (৭৫) নামে এক নারী অভিযোগ করেন, গত ১১ নভেম্বর ওই আওয়ামী লীগ নেতার ইন্ধনে রাস্তা থেকে ধরে একে একে আশরাফ মোল্যা, জাফর শেখ, নাজমুল, জহিরুল, হাসান মেখ ও এনায়েত মৃধাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আহত করা হয়। এর আগে তার এক স্বজন সামসু মোল্যাকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। তাদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে সালথা থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। এরপর কোর্টে মামলা করলে পুলিশকে মামলা তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। কিন্তু এসব মামলার আসামীরা উল্টো তাদের লোকদের পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করাচ্ছে।
এব্যাপারে ইউনিয়ন আওযামীলীগের সেক্রেটারী আলমগীর মিয়া গ্রামবাসীর অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো তাদের বিরুদ্ধেই ইটভাটায় হামলা চালিয়ে ভাংচুরের অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, এলাকার জনৈক জাহিদ মিয়া তার পক্ষের লোকজনকে উস্কানি দিয়ে আমার ইটভাটা ভাংচুড়সহ আমার লোকজনদের বাড়ি ঘরে ভাংচুর করেছে, ১০/১২ জনকে আহত করেছে। আমরা থানায় মামলা করেছি। তারা সবাই বাচ্চু রাজাকারের লোক।
সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হাসিব সরকার বেআইনীভাবে ভ্রাম্যমান আদালতে সাজা দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সেখানে সংঘর্ষের পর আমরা খারদিয়াতে নিয়মিতভাবে অভিযান চালাচ্ছি। যারা মারামারি করতে পারে বা সংঘর্ষে উস্কানি দিচ্ছে তাদেরকে আটক করে আইনানুগ ভাবেই ভ্রাম্যমান আদালতে সাজা দেয়া হচ্ছে। কোন বিশেষ পক্ষের হয়ে এ অভিযান চালানো হচ্ছে না। যাদেরকে আমরা সামনে পাবো তাদেরকেই আমরা আটক করছি।
জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার(নগরকান্দা সার্কেল) এএফএম মহিউদ্দিন জানান, দুই পক্ষের করা মামলারই তদন্ত চলছে। আসামী গ্রেফতারে পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযাগ করা হচ্ছে তা সঠিক নয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে সে যে পক্ষেরই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নিবে।